ওয়েলিংটনের ‘ক্ষত’ নিয়ে আবার ক্রাইস্টচার্চে


ওয়েলিংটনের ‘ক্ষত’ নিয়ে আবার ক্রাইস্টচার্চে

           
 

ভূমিকম্পের শহর ক্রাইস্টচার্চে ফিরেছে বাংলাদেশ দল। ফিরেছে নিজেরাই একটা বড় ‘ভূমিকম্পের’ শিকার হয়ে। কেন্দ্রস্থল ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভ। আর মাত্রা? রিখটার স্কেলেরও সাধ্য নেই সেটি মাপার।
শারীরিক প্রতিবন্ধীদের সাহায্যে কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী সুব্রত। বয়স খুব বেশি না হলেও খুব মূল্যবান একটি কথা শোনা গেল বাংলাদেশের এই তরুণের মুখে। বাংলাদেশ দল ক্রাইস্টচার্চে ফিরেছে শুনে যিনি বলছিলেন, ‘রিক্ত হস্তে দেশে ফেরার জন্যই এল ওরা। নিউজিল্যান্ডে সবকিছুর অনেক দাম। এখান থেকে সহজে কেউ কিছু দেশে নিতে পারে না।’
আসলেই তো! নিউজিল্যান্ড সফরে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্জন কী? ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি সিরিজ নিয়ে ঘাঁটাঘাটি না করাই ভালো। আর ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথম ইনিংসে যা কিছু অর্জন, সবই তো শেষ দিনের ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে গেল। বাংলাদেশ বয়ে বেড়াচ্ছে শুধু এই টেস্টের ক্ষত চিহ্নগুলো। মনে এবং খেলোয়াড়দের শরীরেও।
ক্রাইস্টচার্চে বাংলাদেশ দলের ঠিকানা এবার গ্লস্টার স্ট্রিটের রদেভুঁ হোটেল। ‘কেমন আছেন’ কথাটা এই হোটেলে শুধু সৌজন্য বিনিময়ের প্রশ্ন নয়। আক্ষরিক অর্থেই তা করা হচ্ছে খেলোয়াড়দের শারীরিক অবস্থা জানার উদ্দেশ্যে। মুমিনুল হক হোটেল লবিতে নেমে আসামাত্র তাঁকে ঘিরে সাংবাদিকদের ভিড়। ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাউন্সার ছোবল দিয়েছে তাঁর গায়েও। ক্রাইস্টচার্চে এসেই কাল বুকের পাঁজরের যে এক্স-রেটা করালেন, সেটার রিপোর্ট কী? বাতাসে ঘুরে বেড়াতে থাকে আরও কত কৌতূহল। মুশফিকুর রহিম কেমন আছেন? দ্বিতীয় টেস্ট তাহলে সত্যি সত্যি খেলছেন না অধিনায়ক! আর ইমরুল কায়েস? বাঁ ঊরুর ব্যথা কতটা কমল তাঁর?
ফিজিও ডিন কনওয়ের সঙ্গে কথা বলে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন মিডিয়া ম্যানেজার রাবীদ ইমাম, ‘ক্রাইস্টচার্চে আসার পর ইমরুলের আলট্রাসাউন্ড করানো হয়েছে। ফিজিও জানিয়েছেন, তার ঊরুর পেশিতে ছোট একটি টিয়ার ধরা পড়েছে। ব্যথা আছে। ফিজিও তাকে ৪৮ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। মুমিনুলের এক্স-রে রিপোর্ট এখনো হাতে আসেনি। মাথায় আঘাতের কারণে মুশফিকের এমনিতে কোনো সমস্যা নেই। সে-ও পর্যবেক্ষণে আছে।’
দ্বিতীয় টেস্টে মুশফিকের খেলার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে আগের দিন জানিয়েছেন ফিজিও। রাবীদ ইমামের কথায়ও সে রকম ইঙ্গিত, ‘নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের নিয়ম অনুযায়ী মাথার চোটের পর তিন-চার সপ্তাহ খেলতে নিষেধ করা হয়। মুশফিকের ক্ষেত্রে কী হবে, সেটা টিম ম্যানেজমেন্ট ও তার নিজের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। তবে আঙুলের চোটটাই এই মুহূর্তে বেশি দুশ্চিন্তার।’
মন আর শরীরের ক্ষতের সঙ্গে আরেকটি আলোচনাও এখন বাংলাদেশ দলের ছায়াসঙ্গী। প্রথম টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে নাকি যে উইকেটে খেলা হয়েছে, তার পাশে একটি উইকেট বাদ দিয়ে পরের উইকেটে পানি দিয়েছেন মাঠকর্মীরা। চতুর্থ আম্পায়ার ক্রিস ব্রাউনের সামনেই ঘটেছে এই ঘটনা। অথচ ম্যাচের আগে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, খেলার পাঁচ দিন ম্যাচের উইকেটের দুই পাশে অন্তত দুটি করে উইকেটে পানি দেওয়া যাবে না। কারণ, তাতে ম্যাচের উইকেটও ভিজে ওঠার আশঙ্কা থাকে। বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট সেদিনই বিষয়টি ম্যাচ রেফারি জাভাগাল শ্রীনাথকে জানালেও ক্রিস ব্রাউন দুঃখ প্রকাশ করায় ঘটনা আর বেশিদূর এগোয়নি।
বাংলাদেশ দলের কেউ এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ‘নো কমেন্ট’ বলে এড়িয়ে গেলেন। তবে ঢাকা থেকে বিসিবির মিডিয়া কমিটির প্রধান জালাল ইউনুস মুঠোফোনে নিউজিল্যান্ড সিরিজ কাভার করতে আসা সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ম্যাচ রেফারি জাভাগাল শ্রীনাথ ও ক্রিস ব্রাউনের সঙ্গে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের আলোচনা হয়েছে। ব্রাউন দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, এটি অসাবধানতাবশত হয়ে গেছে। ক্রিকেটের চেতনার স্বার্থে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট সেটা মেনে নেয় এবং ঘটনাটি সেখানেই শেষ হয়ে যায়।’
এটা ঠিক যে ওয়েলিংটন টেস্টের পঞ্চম দিনে উইকেটের আচরণে ‘পানিবাহিত’ কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। এদিনও একের পর এক বাউন্সার আর শর্ট বল দিয়ে গেছেন নিউজিল্যান্ডের পেসাররা। নিল ওয়াগনারের বাউন্সার তো হাসপাতালেই পাঠাল মুশফিককে। তা ছাড়া ব্যাটসম্যানরা যেভাবে আউট হয়েছেন, সেটার জন্য শুধু তাদের দায়িত্ববোধকেই দায়ী করা যায়। উইকেটকে নয়। বেসিন রিজার্ভের উইকেট কোনোভাবেই ব্যাটসম্যানদের আউটে প্রভাব ফেলেনি।
কিন্তু সব পক্ষ মিলে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নিলে সেটি মানা হবে না কেন? বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট যদি পানি দেওয়াটাকে অন্যায়ই মনে করে, তাহলে একজনের দুঃখ প্রকাশে ঘটনা শেষ হয়ে যায় কীভাবে!

0 comments:

Post a Comment