আশা জাগিয়ে হতাশার বৃত্তেই বাংলাদেশ

আশা জাগিয়ে হতাশার বৃত্তেই বাংলাদেশ

মাশরাফি শুরুতেই হেনেছিলেন আঘাত। ছবি: এএফপি৮ ওভারে ৮০ রান দরকার-খুব কঠিন কি? হাতে যখন ৬ উইকেট, আর খেলাটাও টি-টোয়েন্টি। ১৯৬ রানের কঠিন লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে ভালো মতোই ছুটছিল বাংলাদেশ। ১২ ওভারে তুলে ফেলেছিল ১১৬ রান। আশা জেগেছিল। কিন্তু জয়ের জাহাজটা হতাশার ডুবোচরেই আটকে গেল। ১৪৮ রানে অলআউট হয়ে ৪৭ রানে ম্যাচ হারল বাংলাদেশ। হেরে গেল সিরিজও। নিউজিল্যান্ড সফরে এটি টানা পঞ্চম হার মাশরাফির দলের।

কলিন মানরোর প্রথম সেঞ্চুরি ও টম ব্রুসের প্রথম ফিফটিতে ৭ উইকেটে ১৯৫ রান তুলেছিল নিউজিল্যান্ড। এই দুজন চতুর্থ উইকেটে ১২৩ রানের জুটিও গড়েছিলেন। চতুর্থ উইকেটেই সাব্বির-সৌম্য পাল্টা জবাব দিচ্ছিলেন। কিন্তু সাব্বির পারলেন না ‘মানরো’ হতে। সৌম্যরও হওয়া হলো না ‘ব্রুস’। অথচ ৩৬ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর সৌম্য-সাব্বির ভালোভাবেই ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছিলেন ৬৮ রানের জুটিতে।

সৌম্য ভালোই খেলছিলেন। মনে হচ্ছিল না কী ভীষণ চাপে আছেন ফর্মহীনতায়। কিন্তু ভালো খেলতে খেলতে তিন চার ও দুই ছক্কা ৩৯ করে হঠাৎ​ আউট হলেন বাজে বলে। ইনিংসের ১১তম ওভারে। তখনো বাংলাদেশের কাজ কঠিন হয়ে যায়নি। বরং ১২তম ওভারে ৮ রান তুলে বাংলাদেশ সমীকরণটা সহজ অঙ্কে নিয়ে এল। প্রতি ওভারে তুলতে হবে ১০ রান করে। এক-দুটি ব্যয়বহুল ওভার তুলে নিতে পারলে সমীকরণ হয়ে যাবে আরও সহজ।

আর সেই ‘ব্যয়বহুল’ ওভারের খোঁজেই যেন ভুল শট খেলার ঝুঁকিতে গেল বাংলাদেশ এরপর আর জুটিই গড়ে উঠল না। ৩ উইকেটে ১০৪ ছিল স্কোর। আর ৪৪ যোগ করতেই ফিরলেন বাকিরাও। শেষ ৪ উইকেটই পড়েছে ৪ রানের মধ্যে! ভুল শটের ভালো সাক্ষী থাকল স্কোরকার্ড। ৯ ব্যাটসম্যান দিয়েছেন ক্যাচ। টি-টোয়েন্টিতে এক ইনিংসে ৯ জনের ক্যাচ দেওয়ার অষ্টম উদাহরণ।

বাংলাদেশ কঠিন পরীক্ষার মুখে ছিল। টি-টোয়েন্টিতে প্রথমে ব্যাট করে ১৭৪ কিংবা এর বেশি রান তুলে কখনো হারেনি নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশও কখনো ১৬৪-এর বেশি তাড়া করে জেতেনি। কিন্তু জেতেনি বলে কখনো জিতবে না, তাও তো নয়। সিরিজে টিকে থাকার এই ম্যাচে, বিদেশের মাটিতে ১৯৬ তাড়া করে জিততে পারলে মাশরাফির দলকে তা এনে দিন অন্য রকম আত্মবিশ্বাস। উল্টো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের অধিনায়ক হিসেবে যে অভিজ্ঞতার মুখে পড়েছিলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও এখন টানা হার দেখতে হচ্ছে মাশরাফিকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর নেতৃত্বে আগে কখনো টানা ৫ ম্যাচ হারেনি বাংলাদেশ।

ভুলটা মাশরাফিই করেছেন। এই উইকেটে টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়ে। মাশরাফি অবশ্য প্রথম বলে উইকেট তুলে নিয়ে নিজের টস সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণই করতে চেয়েছেন। ৩৬ রানে ৩ উইকেট তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এরপরই টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে চতুর্থ উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ডটা হলো।

বাংলাদেশের ইনিংস নিউজিল্যান্ডকে ভালোমতোই অনুসরণ করছিল। বাংলাদেশও প্রথম ওভারে হারিয়েছে ইমরুল কায়েসকে। তামিম ও সাকিবকে হারিয়েছে পাওয়ার প্লের মধ্যে। চতুর্থ উইকেট জুটিটাও দারুণ হলো। এমনকি নিউজিল্যান্ডের মতো শেষের ওভারে পরপর উইকেটও পড়ল। কিন্তু এত মিলের মধ্যে যতটুকু অমিল, সেটাই গড়ে দিল ম্যাচের আসল পার্থক্য।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ড: ১৯৫/৭ (মানরো ১০১, ব্রুস ৫৯*, উইলিয়ামসন ১২; রুবেল ৩/৩৭, মোসাদ্দেক ১/২২, সাকিব ১/৩২, মাশরাফি ১/৩৮)

বাংলাদেশ:
১৪৮ (তামিম ১৩, কায়েস ০, সাব্বির ৪৮, সাকিব ১, সৌম্য ৩৯, মাহমুদউল্লাহ ১৯, মোসাদ্দেক ১, নুরুল ১০, মাশরাফি ১, রুবেল ১, মোস্তাফিজুর ০*; সোধি ৩/৩৬, উইলিয়ামসন ২/১৬, স্যান্টনার ১/১৪, হুইলার ১/১৬, বোল্ট ১/২৮)

ফল:
নিউজিল্যান্ড ৪৭ রানে জয়ী।

0 comments:

Post a Comment