নারী ফুটবলে ইতিহাস গড়ার দিন আজ

নারী ফুটবলে ইতিহাস গড়ার দিন আজ           

সাফ জিততে পারবে মেয়েরা? ছবি: বাফুফে।
শহরের শিবমন্দির সড়কের পাশেই হোটেল মোনার্ক। এখানেই উঠেছে সাফ টুর্নামেন্টে খেলতে আসা বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল। দুপুরের খাবারের জন্য নিজেদের রুম থেকে বের হচ্ছিলেন গোলরক্ষক সাবিনা, মিডফিল্ডার সানজিদা, স্ট্রাইকার স্বপ্নারা। বেশির ভাগ মেয়েরই চুলে বেণি। ডাইনিংয়ে ঢুকতেই যেন একেকজন হয়ে উঠলেন চঞ্চলা প্রজাপতি। কেউ গাজরের টুকরো মুখে নিয়ে কামড় বসাচ্ছেন। কেউ মজার কোনো গল্প করছেন, অমনি একজন হেসে গড়িয়ে পড়ছেন আরেকজনের গায়ে।
শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ অনেক কঠিন। হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন ভারত। দক্ষিণ এশীয় ফুটবলের পরাশক্তি। তবে শক্তিশালী ভারতের সামনে পড়েও বাংলাদেশের মেয়েরা নির্বিকার। নিরুদ্বেগ। ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে যে জুজুর ভয়টা থাকত, সেটি যে এবার একেবারেই উধাও!
ভারতকে কখনোই হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। এই প্রতিযোগিতার আগে ছয়টি সাক্ষাতে বাংলাদেশ কোনো প্রতিরোধের দেয়াল তুলতে পারেনি। হেরেছে সব ম্যাচ। ২০১০ কক্সবাজার সাফে ভারতের কাছে ৬-০ গোলের হার দিয়ে শুরু বাংলাদেশের। একই বছরে ঢাকায় এসএ গেমসে হার ৭-০ ব্যবধানে। পরের বছর অলিম্পিক বাছাই ও কলম্বো সাফে ভারত ৩-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশকে। এরপর ২০১৪ ইসলামাবাদ সাফ ফুটবলে ভারত জেতে ৫-১ ব্যবধানে। গত বছর এসএ গেমসে শিলংয়েও ভারতের জয়ের ব্যবধান ছিল একই। অথচ সেই ভারতের সঙ্গে এবারের সাফের গ্রুপ পর্বে গোলশূন্য ড্র করেছে বাংলাদেশ।
বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশ দলের পেছনে রয়েছে বয়সভিত্তিক মেয়েদের সাফল্যের গল্প। এবারের জাতীয় দল গড়াই হয়েছে গত সেপ্টেম্বরে ঢাকায় এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ আঞ্চলিক বাছাইয়ের চ্যাম্পিয়ন ১৫ ফুটবলারকে নিয়ে।
এই দল নিয়ে তাই যত ভয় ভারতের কোচ সাজিদ ইউসুফ দারের, ‘এমন বদলে যাওয়া বাংলাদেশকে আমি কখনোই দেখিনি। যোগ্য দল হিসেবেই ওরা ফাইনালে উঠেছে। বাংলাদেশকে যথেষ্ট সমীহ করছি।’
টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের জালে একটি গোলও ঢোকেনি। এর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব গোলরক্ষক সাবিনা আক্তারের। গোলপোস্টের নিচে যেন অতন্দ্রপ্রহরী যশোরের এই মেয়ে।
গ্রুপ পর্বে ভারতের সঙ্গে দুর্দান্ত খেলেছিলেন সাবিনা। আজও কি তেমনই দেখা যাবে? প্রশ্নটা করতেই সাবিনার আত্মবিশ্বাসী উত্তর, ‘গ্রুপ পর্বে ভারতের বিপক্ষে যে সেভ গুলো করেছি, ওটা নিয়ে এখন আর ভাবছি না। ওটা এখন অতীত। এটা ফাইনাল, নতুন ম্যাচ। আগের সবকিছু ভুলে নতুন করে শুরু করব।’ টুর্নামেন্টে একাধিকবার পোস্ট আগলে রাখার পাশাপাশি জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে ডিফেন্ডারদের মতো বল ক্লিয়ার করেছেন।
প্রশংসার দাবি রাখেন বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররাও। অনূর্ধ্ব-১৬ দলের এই মেয়েরা রক্ষণটাকে বানিয়ে রেখেছেন ‘চীনের প্রাচীর’। কাল সংবাদ সম্মেলনে কোচ গোলাম রব্বানীর মুখেও ঝরল সেই প্রশংসা, ‘এখানে যে ছয়জন ডিফেন্ডার নিয়ে এসেছি, ওদের সবাই অনূর্ধ্ব-১৬ দলের। ওদের নিয়ে একটা শঙ্কা ছিল আমার মনে। কিন্তু এখানে ওরা আমার সেই শঙ্কাটা উড়িয়ে দিয়েছে।’
কোচকে আশার গান শোনাচ্ছেন সাবিনা, কৃষ্ণা, স্বপ্নারা। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ১২টি গোল করা সাবিত্রা ভান্ডারির দল নেপালকে সেমিফাইনালে হারিয়েছে ভারত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা (৭ গোল) বাংলাদেশের সাবিনা খাতুন। সেমিফাইনালে হ্যাটট্রিক করে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে রয়েছেন স্বপ্নাও। ভালো কিছু করার সামর্থ্য এই দলের রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কোচ, হল্যান্ড-ডেনমার্কপ্রবাসী ফুটবলার নিয়ে টুর্নামেন্টে আসা আফগানিস্তানকে গ্রুপ থেকে বিদায় করেছে বাংলাদেশ। ভারতে আসার আগে মালদ্বীপের মেয়েরা দুবাইয়ে ক্যাম্প করেছে, জাপানি কোচ তাদের দুই বছর ধরে অনুশীলন করিয়েছেন। কিন্তু সেই মালদ্বীপকেও সেমিফাইনালে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ।
এই টুর্নামেন্টটা হতে পারে সাবিনা-স্বপ্নারও। বাংলাদেশের এ পর্যন্ত করা ১২টি গোলের ১১টিই এই দুজনের। দুজনই করেছেন হ্যাটট্রিক। আজ সন্ধ্যায়ও এই জুটি জ্বলে উঠলে ১৪ বছর পর হয়তো সাফের ট্রফি আবারও আসতে পারে বাংলাদেশে।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ : সাবিনা আক্তার, শিউলি আজিম, শামসুন্নাহার, নার্গিস খাতুন, মাসুরা পারভীন, মাইনু মারমা, জাহান মৌসুমি, সিরাত জাহান স্বপ্না, সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানি সরকার, মারিয়া মান্দা।

0 comments:

Post a Comment