মানরোর কাছে হারল বাংলাদেশ

মানরোর কাছে হারল বাংলাদেশ

গত ম্যাচে ‘জিরো’, এই আজ মানরো ‘হিরো’। ছবি: এএফপিকলিন মানরোকে প্রিয় প্রতিপক্ষ নিশ্চয়ই এখন বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ৮৭ রান করেছেন এবারের সিরিজেরই প্রথম ম্যাচে। বে ওভালে আজ দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে করে ফেললেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি।

ক্রাইস্টচার্চ, নেলসন আর নেপিয়ারে অল্প কিছু সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশিই খেলা দেখতে এসেছিলেন মাঠে। সে তুলনায় মাউন্ট মঙ্গানুয়িতে লাল-সবুজের সমারোহ অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। এই শহরের শ তিনেক প্রবাসী তো আছেনই, নিউজিল্যান্ডের অন্যান্য অনেক শহর থেকেও অনেক বাংলাদেশি দর্শক আজ এসেছেন বে ওভালে। কিন্তু মানরোর সেঞ্চুরির সুবাদে নিউজিল্যান্ড ১৯৫ রান করে ফেলার পর মনটাই খারাপ হয়ে গেল ওয়েলিংটন থেকে আসা ব্যবসায়ী মাসুমের, ‘আজ তো অবস্থা খারাপ...।’

মাসুমের মতো আরও অনেক বাংলাদেশি দর্শককেই হতাশ করে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত ৪৭ রানে হেরেছে বাংলাদেশ দল। তাতে এক ম্যাচ বাকি থাকতে নিশ্চিত হয়ে গেল সিরিজ হারও।

বাংলাদেশের ইনিংসের শুরু থেকে অবস্থা খারাপ হতে লাগল আরও। বে ওভালের সর্বোচ্চ টি-টোয়েন্টি ইনিংস তাড়া করতে গিয়ে ৩৬ রানেই নেই তিন উইকেট! ইনিংসের চতুর্থ বলে বাঁহাতি স্পিনার মিচেল স্যান্টনারের প্রথম শিকার ইমরুল কায়েস। স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন মিড উইকেটে। চতুর্থ ও পঞ্চম ওভারে ফিরে যান আরেক ওপেনার তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান।

সাব্বির রহমান আর সৌম্য সরকারের চতুর্থ উইকেট জুটি সেখান থেকেই আশা দেখাল বাংলাদেশকে। সাব্বির তো ফর্মে ছিলেনই, সৌম্যও হারানো ফর্ম ফিরে পাওয়ার একটা সম্ভাবনা দেখালেন। এই জুটি যতক্ষণ উইকেটে ছিল, ছিল আশাও। কিন্তু ২৬ বলে ৩৯ রান করে সৌম্য ফিরে যাওয়ার দুই ওভার পর সোধির বলে লং অফে ক্যাচ তুলে দেন সাব্বিরও। ৩২ বলে ৪৮ রানের ইনিংসে তিন ছক্কা আর তিন বাউন্ডারি সাব্বিরের। গ্র্যান্ডহোমকে প্রথম ছক্কাটি মেরেছেন দারুণ এক স্কুপ শটে। পরের দুটিই লং অন দিয়ে। একটি সোধিকে, অন্যটি ওই গ্র্যান্ডহোমকেই।

সৌম্যকে অনেক দিন পর দেখা যাচ্ছিল তাঁর আসল চেহারায়। ২৬ বলে ৩৯ রানের পুরো ইনিংসেই ছিলেন আত্মবিশ্বাসী। সোধিকে ওয়াইড লং অন দিয়ে আর গ্র্যান্ডহোমকে লং অন দিয়ে মারা ছক্কা দুটি দেখে মনেই হয়নি এর আগে খেলা সিরিজের দুটি ওয়ানডেতে গতিজড়তায় ভুগেছে তাঁর ব্যাট। ট্রেন্ট বোল্টের স্লোয়ার শর্ট বলে করা হুকটা আরও নিখুঁত হলে বে ওভালে সৌম্য হয়তো আরও বড় কিছুই উপহার দিতেন আজ।

সাব্বিরের বিদায়ের পর হুড়মুড় করেই ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ইনিংস। ৩০ রানে শেষ ৬ উইকেটের পতন। যেন ব্যাটিং করতে নয়, নিউজিল্যান্ডের ফিল্ডারদের ক্যাচ প্র্যাকটিস করতেই নেমেছিলেন ব্যাটসম্যানরা! তামিম ইকবালের রান আউটটি ছাড়া বাংলাদেশ দলের বাকি সব ব্যাটসম্যানই আউট হয়েছেন ক্যাচ দিয়ে।

নিউজিল্যান্ড ইনিংসের পুরোটাই ছিল মানরোময়। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে এর আগে সেঞ্চুরি হয়েছে তিনটি। আহমেদ শেহজাদ, রিচি বেরিংটন এবং ব্রেন্ডন ম্যাকালামের পর কাল মানরোও নাম লিখিয়েছেন সে তালিকায়। বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে তাঁর এই সেঞ্চুরির কথা সবচেয়ে বেশি মনে থাকবে মাহমুদউল্লাহর। ইনিংসের নবম ও নিজের প্রথম ওভারে মাত্র চার রান দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৩তম ওভারে মাশরাফি আবারও তাঁকে বোলিংয়ে ফিরিয়ে যেন ভুলই করলেন। প্রথম, তৃতীয় ও শেষ বলে মানরোর ব্যাট থেকে এল তিন ছক্কা। মাঝে দুটি বাউন্ডারিসহ মাহমুদউল্লাহর ওই এক ওভারেই মানরো নিয়েছেন ২৮ রান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল ওভার।

৫৪ বলে ১০১ রানের ইনিংসে মানরোর ছক্কা আছে আরও চারটি, যার দুটিই মোসাদ্দেকের এক ওভারে।

গ্র্যান্ডহোম আর নিশামকে ফেরানোর পর পেসার রুবেল হোসেনের তৃতীয় শিকার মানরো। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং ঝড়ও ওখানেই শেষ। এরপর ইনিংসের শেষ তিন ওভার চার বলে আর মাত্র ২৬ রানই যোগ করতে পেরেছে তারা।

তাতে কী? কলিন মানরোর একার কাছেই যে হেরে গেছে বাংলাদেশ!

0 comments:

Post a Comment