দিনশেষেও শুরুর সেই শট



রবিবার । ২৩ অক্টোবর ২০১৬


দিনশেষেও শুরুর সেই শট

                     

দুজনেই অলরাউন্ডার। তবে ব্যাটে-বলে কাল সাকিব আল হাসানকে ছাড়িয়ে গেছেন বেন স্টোকস, এগিয়ে তাঁর দল ইংল্যান্ডও


ঠিক নিয়ম নয়। তবে সংবাদ সম্মেলনে দিনের সেরা পারফরমারের আসাই দস্তুর। কিন্তু সাকিব আল হাসান কাল আসেন না। ৭৯ রানে ৫ উইকেট নেওয়া সত্ত্বেও। হয়তো সাতসকালে দিনের দ্বিতীয় বলে ‘পাগলামি’ শট খেলে আউট হয়ে যাওয়ার কারণেই! তবু দুই দলের সংবাদ সম্মেলনের চুম্বক অংশ সাকিবই, সকালের ওই শটের কারণে।

বাংলাদেশের অন্যদের মধ্যে কাল আর কেউ পাননি এক উইকেটের বেশি। আর ২৭ রানে শেষ পাঁচ উইকেট হারানোয় ব্যাটিংয়ে পারফরমার খোঁজা অনর্থক। অগত্যা ভরসা কোচিং স্টাফ। বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় গণমাধ্যমের সামনে। তাঁর দায়িত্বের পরিধির মধ্যে সাকিবের ব্যাটিং পড়ে না। তবে ওই দায়িত্বহীন ব্যাটিং যে বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে হতাশার রেণু ছড়িয়ে দেয়, তা বলে যান ওয়ালশ, ‘সাকিবের আউটটি ছিল ভীষণ হতাশার। অনেক প্রত্যাশা নিয়ে ও আজ ব্যাটিং করতে নামে। জানত, আমাদের মূল ভরসা সে। গতকাল খুব ভালো ব্যাটিং করেছে কিন্তু নতুন দিনে ব্যাটিং করা তো নতুন শুরু। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সাকিব আজ প্রথম ওভারে আউট হয়ে গেছে, যা আমাদের অন্য ব্যাটসম্যানদের প্রবল চাপে ফেলে দেয়।’ ইংল্যান্ডের জন্য ওই উইকেট ছিল অপ্রত্যাশিত এক উপহার। যাতে ভীষণ অবাক হওয়ার কথা স্বীকার করে যান ইংলিশ অলরাউন্ডার বেন স্টোকস, ‘সকালের দ্বিতীয় বলে অমন শট বিস্মিত করার মতোই। অবশ্যই সাকিব ওদের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। হয়তো ও ভেবেছে, মেরে খেলে আমাদের স্পিনারদের চাপের মুখে ফেলে দিতে। তবে মঈন ইনিংসজুড়ে যেভাবে বোলিং করেছে এবং উইকেট থেকে যেমন স্পিন পাচ্ছিল—তাতে ওর বিপক্ষে সাকিবের তা করা কঠিনই ছিল। ওর আউটে বাংলাদেশকে দ্রুত অলআউট করার দরজাটা খুলে যায় আমাদের জন্য।’

বাংলাদেশকে এরপর দ্রুতই অলআউট করে দেয় ইংল্যান্ড। ২৭ রানের মধ্যে শেষ পাঁচ উইকেট তুলে নিয়ে। এরপর নিজেরা দ্বিতীয় ইনিংসে আট উইকেটে ২২৮ রান তুললে লিড হয়ে যায় ২৭৩ রানের। চট্টগ্রামের উইকেট বিবেচনায় যা ৪৭৩ রানের মতো। তবু এখনো জয়ের আশা ছাড়ছেন না ওয়ালশ, ‘আগে আমাদের ওই শেষ দুটি উইকেট তুলে নিতে হবে। ম্যাচ এখনো উন্মুক্ত। এই পর্যায়ে যেখানে থাকলে আমরা খুশি হতাম, ইংল্যান্ড তার চেয়ে ২০-৩০ রানের মতো বেশি করেছে। আমার মনে হয়, বোলাররা আজ খুব ভালো লড়াই করেছে। একসময় তো পরিস্থিতি খুব, খুব ভালো দেখাচ্ছিল। কিন্তু এরপর ওরা ভালো এক জুটি গড়ল। এটাই টেস্ট ক্রিকেট।’ টেস্ট ক্রিকেটের জয়গানের পাশাপাশি নিজেদের জয়ের করণীয়টাও বলে দেন এই ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি, ‘আমার কাছে মনে হয়, ম্যাচ এখনো ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আমাদের দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো ব্যাটিং করতে হবে। আর ম্যাচে তো এখনো সময় আছে। জয়-পরাজয়ের কোনো একটি ফল তাই হবে।’ জয়ের জন্য ইতিবাচক ব্যাটিং করা এবং জুটি গড়ার কথা আলাদা করে বলেন তিনি, ‘দ্বিতীয় ইনিংস ব্যাটিংয়ে আমাদের ইতিবাচক হতে হবে। পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলতে হবে। খারাপ বল থেকে নিতে হবে রান। যদি দুটি কিংবা তিনটি জুটি গড়ে তুলতে পারি, তাহলে আমাদের ভালো সম্ভাবনা থাকবে। এখন আমাদের লক্ষ্য হতে হবে ইংল্যান্ডের লিডকে ৩০০-র মধ্যে রাখা। কাজটি সহজ না। তবে আমি মনে করি, ম্যাচে এখনো দুই দলের সমান সম্ভাবনা।’

স্বাভাবিক কারণেই ইংল্যান্ড ক্যাম্পের ভাবনাটা অন্য রকম। প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা স্টোকস তো জয়ের আগাম চিত্রনাট্য লিখে ফেলছেন, ‘উইকেটে বল ঘুরছে। আর বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনে রয়েছেন বেশ কয়েকজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। আমাদের দুই অফ স্পিনারের বিপক্ষে ওদের খেলা কঠিন হবে। এ কারণেই বলছি, লিডকে ৩২০ পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারলে তা হবে দারুণ ব্যাপার। আশা করি, এরপর আমরা ওদের অলআউট করতে পারব।’ ওই ৩২০ পর্যন্ত লিড নিতে হলে হাতে দুই উইকেট নিয়ে যোগ করতে হবে আরো ৪৭ রান। উইকেটের চরিত্র বিবেচনায় যা মোটেই সহজ না। বল হাতে চার শিকারের পর ৮৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলা স্টোকস অবশ্য সতীর্থদের ওপর আস্থা রাখছেন, ‘এখনই তো ২৭০ রানের মতো এগিয়ে আছি। লিডকে যদি ৩০০, ৩১০, ৩২০ পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারি, তা হবে দারুণ ব্যাপার। আমাদের ব্যাটিং লাইনের গভীরতা অনেক। ব্রডের টেস্ট সেঞ্চুরি রয়েছে, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ওকসের আছে ৯-১০টি শতরান। আমাদের তাই আরো ৫০ রান যোগ না করার কোনো কারণ নেই।’

যদি সত্যি সত্যি আরো ৫০ রান যোগ করে ইংল্যান্ড, তাহলে? বাংলাদেশের আশার টানেল সরু হতে হতে একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। অবশ্য এ মাঠেই বাংলাদেশের নাগালের মধ্য থেকে জয় দূরে ঠেলে দিয়েছিলেন ড্যানিয়েল ভেট্টরি। খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলে নিউজিল্যান্ডকে টেস্ট হারের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন এ বাঁহাতি। তেমন কেউ কি দাঁড়িয়ে যাবেন আবার চট্টগ্রামে, এবার বাংলাদেশের হয়ে?


 

0 comments:

Post a Comment