মুশফিককে না পেয়েই

মুশফিককে না পেয়েই

মাঠ থেকে হোটেলে ফিরেই যে যাঁর লাগেজ লবিতে এনে রাখছিলেন। আজ সকালে ওয়েলিংটন হয়ে নেলসনের ফ্লাইট। আগের রাতের মধ্যেই জিনিসপত্র গোছগাছ করে রাখাটা জরুরি।
রেইজেস লাটিমার হোটেলের লিফটে লাগেজ নিয়ে নামার সময় মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল তাসকিন আহমেদের। মুখে রাজ্যের অন্ধকার। বোলারদের প্রতিনিধি হিসেবে তাসকিনের মন খারাপ থাকাটাই স্বাভাবিক। মাহমুদউল্লাহ তবু প্রবোধ দিলেন, ‘একটা ম্যাচ এ রকম হতেই পারে। সব ঠিক হয়ে যাবে। এটাই ক্রিকেট।’

গাপটিলকে বেশ দ্রুতই আউট করে মাশরাফি-সাকিবের অভিনন্দন পেলেন মোস্তাফিজ। তবে ছন্দটা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেননি বাঁহাতি পেসার। নিউজিল্যান্ডের কাছে প্রথম ওয়ানডেতে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে মেনে নিতে হয়েছে বড় পরাজয় l ছবি: বিসিবি

নিউজিল্যান্ডের মাঠ একটু ছোট। তার ওপর হ্যাগলি ওভালের উইকেট দারুণ ব্যাটিংবান্ধব। ২৮০-৩০০ রানও এই মাঠে তাড়া করে জেতা সম্ভব বলে মনে করছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু ৩৪১ রান তাড়া করার জন্য একটু বেশিই। প্রতিপক্ষের স্কোর এ রকম উচ্চতায় চলে গেলে পরে ব্যাটসম্যানরা কতটুকু করতে পারলেন, সেটা আর বিবেচ্য থাকে না। তার ওপর বাংলাদেশের স্কোর ২৬৪ খুব খারাপও নয়, সেটাও ব্যাটিংয়ে পুরো মুশফিককে না পেয়েই। ব্যাটিংয়ে নামার আগেই কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে যেতে হলো বোলারদের। এই ম্যাচ বাংলাদেশ হারলে বোলারদের জন্যই হারবে। তারা কেন ৩৪১ করতে দিল নিউজিল্যান্ডকে? নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে হারের দায় বোলারদের ওপর স্বয়ংক্রিয়ভাবেই পড়ছে। তাঁদেরই একজন প্রতিনিধি হয়ে তাসকিনের মন ভালো থাকে কী করে?
তাসকিন-মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে দেখা হওয়ার একটু আগে হোটেলের সামনেই কথা হচ্ছিল তামিম ইকবালের সঙ্গে। নিউজিল্যান্ডের রানটা কি একটু বেশিই হয়ে গেল? তামিমের উত্তর ছিল, ‘বেশি তো বটেই...ওরা ৩৪১ করার পরই তো ম্যাচ শেষ।’ তবু খেলার পর নাকি কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে এ নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করেননি। হয়তো ফলাফলটাকে তিনি স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়দের কাছে হ্যাগলি ওভালের উইকেট হাতের তালুর মতো চেনা। হাজার হাজার মাইল দূর থেকে আসা বাংলাদেশ দলের কল্পনা ২৮০-৩০০ পর্যন্ত গেলে স্বাগতিক হিসেবে তো নিউজিল্যান্ড ৩৪১ করতেই পারে।
তবে বাংলাদেশের বোলারদের জন্য দিনটা ছিল আসলেই খারাপ। মোস্তাফিজুর রহমানের কথাই ধরুন। ১০ ওভারে ২ উইকেট নিলেও রান দিয়েছেন ৬২। এখন পর্যন্ত খেলা ১০টি ওয়ানডেতে এই প্রথম ৬০-এর ওপরে রান দিলেন। অন্য বোলারদের কেউ মোস্তাফিজের মতো ‘রেকর্ড’ না করলেও খুব যে ভালো বল করেননি, সেটা স্কোরকার্ডই বলে দেয়।
ফেরার ম্যাচে মোস্তাফিজের পারফরম্যান্স সম্পর্কে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার মূল্যায়ন, ‘মোটামুটি ঠিকঠাক ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও উন্নতি আসবে।’ তবে সার্বিকভাবে বোলিং নিয়ে সন্তুষ্ট নন তিনিও, ‘আমরা একটু বেশি শর্ট বল করেছি। এই কন্ডিশনে শর্ট বল অবশ্যই করতে হবে, তবে তা কার্যকরভাবে। যে রকম নিউজিল্যান্ডের বোলাররা করেছে। তাদের শর্ট বলগুলো এসেছে আমাদের মাথা বরাবর। আমাদেরগুলো ছিল তাদের বুক উচ্চতায়।’
মাশরাফি যেটা বলছেন সেটার সঙ্গে বোলারদের সামর্থ্যেরও একটা যোগসূত্র আছে। নিউজিল্যান্ডের বোলারদের সঙ্গে বাংলাদেশের বোলারদের সামর্থ্যের তুলনা তো করতেই হবে, উইকেট-কন্ডিশন বোঝারও একটা ব্যাপার আছে। হ্যাগলি ওভালের উইকেট ব্যাটিং সহায়ক—এটুকু উইকেটের চেহারা দেখেই বোঝা গেলেও একটা উইকেটের সব দিক বুঝে উঠতে সে ধরনের উইকেটে খেলার অভ্যাস থাকাটও জরুরি। বাংলাদেশের পেসাররা সেই সুযোগ কতটুকুই বা পান!
পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ মাশরাফি-তাসকিনদের দায়িত্ব নিয়েই তুলে ধরেছিলেন সমস্যাটা। চোখের সামনে ছাত্রদের এভাবে মার খেতে দেখে নিশ্চয়ই ভালো লাগেনি তাঁর। হোটেলে ফেরার পর রাশভারী এই ক্যারিবিয়ানকে হয়তো সে কারণেই আরও গম্ভীর লাগল। জ্যামাইকার কিংস্টন থেকে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও নিউজিল্যান্ডের ছয়টি বিমানবন্দর ঘুরিয়ে ওয়ালশকে ক্রাইস্টচার্চে আনতে এবং আবার একই পথে ফেরত পাঠাতে নাকি খরচ পড়ছে প্রায় ২৯ লাখ টাকা! টাকাটা বিসিবির হলেও এর বিনিময়ে নিশ্চয়ই এমন বোলিং দেখতে আসেননি ওয়ালশ। এত টাকা নাসাকে দিলে পৃথিবীর কাছের কোনো গ্রহে ঘুরে আসা যেত কি না, তা নিয়ে ক্রাইস্টচার্চে এখন রীতিমতো গবেষণা চলছে।
মাশরাফির কথায় অবশ্য ওয়ালশ আর শিষ্যরা কিছুটা সান্ত্বনা পেতে পারেন। ব্যাটিং-বোলিংয়ের তুলনায় যে জায়গায় উন্নতি করাটা সহজ ও কম সময়সাপেক্ষ, সেই ফিল্ডিংয়েও যে ব্যর্থই বাংলাদেশ দল। ফিল্ডিং নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি ইংরেজি ‘ল্যাথারজিক’ শব্দটাই ব্যবহার করলেন, ‘আমরা ফিল্ডিংয়ে অনেক ল্যাথারজিক ছিলাম। অনেক দুই-তিন হয়েছে যেগুলো চাইলে আটকানো যেত। ওখানেই ওদের ২০ রানের মতো বেশি হয়েছে। বোলিং-ফিল্ডিং ভালো হলে আমরা ৪০টি রান কম দিতাম। বাড়তি রানটাই ভুগিয়েছে।’
মাশরাফির বক্তব্যে যেন তামিমের কথারই প্রতিধ্বনি। বাংলাদেশ যতই শেষ পর্যন্ত ২৬৪ রান করুক, খেলা আসলে নিউজিল্যান্ড ৩৪১ করার পরই শেষ।

0 comments:

Post a Comment